পাভেল আমান।।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বাগদেবীর আরাধনা অর্থাৎ সরস্বতী পুজো। প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন বেশ সুষ্ঠু ও মর্যাদার সাথে অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী পুজো। শিক্ষা, সংস্কৃতি সব কিছুতেই মা সরস্বতীর কথা মাথায় রেখেই এগোনো হয়।স্কুল, কলেজের ছেলে মেয়েরা এই দিনটায় নতুন উদ্যোগে এগিয়ে চলে। তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই অনুভূত হয় পড়াশোনার প্রতি ভালোলাগা উচ্ছ্বাস সর্বোপরি বাগদেবীর আশীর্বাদ লাভের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা আরাধনা ও মননে জপমালা । জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিদ্যার দেবী যেন সকল শিক্ষার্থীর কাছেই সমানভাবে পূজনীয় ও গ্রহণীয়। বাংলা ও বাঙালির যাপিত জীবনে বিশেষত শিক্ষার্থীদের কাছে দেবী সরস্বতী গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার দেবী। সরস্বতীর দেবীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে সরস্বতী পুজো উৎসব আকারে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের “পুরষ্কার” কবিতায় আবেগঘনভাবে সরস্বতীর বন্দনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে বাগদেবীর আরাধনা গুন কীর্তন অনেকভাবে প্রতিফলিত ও আলোচিত হয়েছে।
পঞ্জিকা অনুসারে, বর্তমান মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথির সূচনা ০৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোর রাত ৩ টে বেজে ৪৬ মিনিট থেকে হচ্ছে। পঞ্চমীর পরের দিন ৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাত ৩ টে বেজে ৪৬ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। একই ভাবে সরস্বতী পূজা ০৫ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে। এই দিনেই বসন্ত পঞ্চমীর শুরু। বসন্ত পঞ্চমীর দিন সরস্বতী পূজার জন্য শুভ মুহুর্ত ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ৭ টা বেজে ৭ মিনিট থেকে রাত ১২ টা বেজে ৩৫ পর্যন্ত থাকবে।বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজো করে শিশুদের হাতেখড়ি দেওয়া হয়। প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর পূজা হয়। বিদ্যার্থীরা সরস্বতীর আশীর্বাদে বিদ্যালাভের আশায় তাঁর আরাধনা করে। এই পুজোর জন্যে সকলে সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্যে সরস্বতী পুজো খুবই স্পেশাল। সকাল থেকেই উপোস থেকে বাগদেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন তারা। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের প্রার্থনা করেন সরস্বতী মায়ের কাছে।সরস্বতী পুজোর দিন ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। বসন্ত পঞ্চমীর দিন ভোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী পূজা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সকলে খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার পোশাকে দেবীর পুজো করবে। সেদিন মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না, নিরামিষ খেতে হয়। পুজোর আগে মঙ্গল কামনায় উপবাস রাখা হয়। ওইদিন লেখাপড়ায় নিষেধ থাকে। পূজার আগে বিদ্যার্থীদের কুল খাওয়া বারণ। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পরদিন সকালে আবার পূজা করার পর চিড়ে ও দই মেশানো দধিকর্মা নিবেদন করে নিয়মবিধি সমাপ্ত হয়। পূজাশেষে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও পূজার দু-তিন পরে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।বাঙালি জীবনে সরস্বতী পুজো এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। শতাব্দীর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের তাণ্ডবে যখন চারিদিকে বিপন্নতা অসহায়তা বিপর্যয় ভেঙে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জগত থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হারিয়ে ফেলেছে শিখনের অভ্যাস।সেই ঝিমিয়ে পড়া, নেতিয়ে যাওয়া, স্তব্ধ প্রায় পড়ুয়াদের নাড়া দিতে স্পন্দিত করতে সর্বোপরি ধারাবাহিক পড়াশোনায়় মনোনিবেশ করতে বাগদেবীর আরাধনা গুরুত্বপূর্ণ। দেবী স্বরস্বতীর কাছে আমাদের করজোড়েেে নিবেদন প্রার্থনা আপামর পড়ুয়ারা যেন আবার পূর্বের পড়াশোনার জগতে ফিরে আসে। ইতিমধ্যে খুলে গিয়েছে কোভিড বিধির সুরক্ষাতে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফিরে আসুক সমস্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলের শ্রেণিকক্ষে। তারা নিরবচ্ছিন্ন পঠন-পাঠনে ফিরে পাক সেই হারিয়েে যাওয়া স্কুুল জীবন। আসন্ন সরস্বতী পুজোর পুণ্য লগ্নে বাগদেবীর কাছে আমাদের একটাই মিনতিিি অচিরেই সমস্ত কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাক। পড়ুয়ারা আবারো পূর্ণ মন বলে শুরু করেে দেক পড়াশোনার ধারাবাহিকতা।
-পাভেল আমান- হরিহর পাড়া -মুর্শিদাবাদ- পশ্চিমবঙ্গ- ভারত
Leave a Reply